সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি বনেকের

প্রকাশের তারিখ: 09/11/2020

শুধু সংবাদ প্রকাশের অপরাধে টানা ১১ মাস ৫ দিন সাজানো মামলা হামলায় জেল জুলুমে বিপর্যস্ত আলোচিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তাফা খানের বিরুদ্ধে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় বরখাস্ত হওয়া টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার ইন্ধনে দায়রেকৃত সব মামলা প্রত্যাহার, স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা এবং অমানুষিক নির্যাতনের বিচার দাবি করেছেন দেশের সেরা সংসগঠন বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ ( বনেক)। ৯ নভেম্বর সোমবার সংগঠন টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোঃ খায়রুল আলম রফিক ও সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আসাদ স্বাক্ষরিত এক আবেদনে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ও আইন মন্ত্রণালয় সহ সরকারের উপর মহলে লিখিতভাবে এই দাবী জানানো হয়।

আবেদন সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়,কারামুক্ত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান একে একে ৬টি সাজানো মামলার কারণে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তারও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

তারা বলেন জামিনে কারা মুক্তির পর এ বিষয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে লিখিত আবেদন ও করেছেন ফরিদুল মোস্তফা খান।
সরকারের চলমান মাদক ও ঘুষ-দুর্নীতি বিরোধী অভিযানকে সফল করতে ধারাবাহিক প্রতিবেদন করেন ফরিদুল মোস্তফা। আপোষহীন লেখালেখির পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্রও তুলে ধরেন তিনি। উপস্থাপন করেন প্রদীপ ও তার লালিত সিন্ডিকেটের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড। তাতে ওসি প্রদীপ চড়াও হয় বলে আবেদনে উল্লেখ করেন সাংবাদিক নেতারা।

তাদের দাবি, মাদক নির্মূলের নামে বেপরোয়া মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসা করেছেন টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ। তার কারণে পুলিশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের কারণে অবনতি ঘটেছে আইন শৃঙ্খলা।

বেপরোয়া ঘোষ লেনদেন, মা-বোনদের সম্ভ্রমহানি, নিরীহ মানুষ হত্যাসহ মানবতা বিরোধী টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ ও সদরের সাবেক ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকারের হরেক অপকর্মের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রতিবেদন করেন ফরিদুল মোস্তফা।

এতে দেশ বিদেশে তাদের বিপুল সহায় সম্পদ, টাকা পাচার, অপরাধ লালনপালনসহ সরকার বিরোধী নানা কর্মকান্ডের তথ্য ওঠে আসে। ফলে প্রদীপ-ফরিদ উদ্দিন খন্দকারসহ তাদের লালিত বাহিনীর সদস্য তথা বাঘা বাঘা মাদক ব্যবসায়ীরা ক্ষিপ্ত হয়। সাংবাদিক ফরিদুলকে হত্যায় মরিয়া হয়ে উঠে। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করার সুযোগও পান নি। জীবন বাঁচাতে চলে যান আত্মগোপনে। এই ফাঁকে কক্সবাজার শহরের মধ্যম কুতুবদিয়াপাড়ায় ফরিদের বসতবাড়িতে রাতের অন্ধকারে হামলা, ভাঙচুর ও লুটতরাজ চালানো হয়। এ সময় রক্ষা পায়নি তার বৃদ্ধ মা ও বোনেরাও। পরে ঢাকা থেকে ধরে এনে ওই বাড়িতে ফরিদুল মোস্তফাকে ঢুকিয়ে অস্ত্র, ইয়াবা ও বিদেশী মদ উদ্ধার দেখানো হয়।

ফরিদুল মোস্তফার মামলা প্রত্যাহারের উক্ত আবেদনে বাংলাদেশ অনলাইন সম্পাদক পরিষদ উল্লেখ করেন, প্রাণ রক্ষায় সাংবাদিক ফরিদুল ঢাকার একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। জানমালের নিরাপত্তা চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপির সাথে দেখা করেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রদীপ সিন্ডিকেটের কুকীর্কির ২০ পৃষ্টার ডকুমেন্টসসহ লিখিত আবেদন দেন। ওই সময় সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দেন মন্ত্রী।

কক্সবাজারের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান। তার ওপর ঘটে যাওয়া অমানবিকতা সবাইকে নাড়া দেয়। পুলিশের হেফাজতে রেখে হাত-পায়ের নখ তুলে ফেলা আর চোখে মরিচের গুঁড়া ঢেলে বিভৎস দৃশ্যটি হতভম্ব করে দিয়েছে সব বিবেক।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের কাছে ফরিদুল মোস্তফার করা আবেদনে সেই করুণ চিত্র ফুটে ওঠে। ইতিহাসের এমন বর্বরতম ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন তিনি।

দীর্ঘ ১১ মাস ৫ দিন কারাভোগের পর গত ২৭ আগস্ট জামিনে মুক্ত হন ফরিদুল মোস্তফা। তখন থেকে তিনি কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। বর্তমানে সাংবাদিক ফরিদুলের শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। সব হারিয়ে মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত তিনি পরিবার নিয়ে এখন তাদের থাকার জায়গা নেই, রয়েছেন চরম অর্থ সংকটে। এ অবস্থায় এত গুলো মিথ্যা মামলার ঘানি কিভাবে টানবেন তিনি?

এ নিয়ে খুবই চিন্তিত ফরিদ ও তারপরিবার। প্রদীপের আগুনে পুড়লো তাদের সুখের জীবন। মিথ্যা মামলা আর সংসারের খরচ যোগাতে বসতভিটা বিক্রি করে নিঃস্ব তুখোড় মেধাবী ও দেশ প্রেমিক এই সাংবাদিক।

এখন তাদের নেই মাথা গুজার ঠাঁই। সন্তানদের পড়ালেখাও বন্ধ। চিকিৎসার খরচ নিয়ে সংকটে। বৃদ্ধ মা আর স্ত্রী-সন্তানদের কোথায় রাখবে, তার কিনারা খুজে পাচ্ছে না উক্ত সাংবাদিক ফরিদ ও তার অসহায় পরিবার।

মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ড ও দুদকের মামলায় প্রদীপ কারাগারে থাকলেও তার অন্যান্য সহযোগিরা বাইরে। তাই জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে চরমভাবে শঙ্কিত ফরিদুল মোস্তফা।

এমতাবস্থায় জীবনের নিরাপত্তা দাবীর পাশাপাশি মাথা গুজার ঠাঁই বসতবাড়ি, এবং আর্থিক সহযোগিতাসহ প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রদানের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করতে বাধ্য হন অনলাইন সম্পাদক পরিষদ।

উল্লেখ্য, নির্যাতনের ঘটনায় প্রদীপ কুমার দাশসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে গত গত ৮ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার সিনিয়র জুুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সদর) আদালতে ফৌজদারি দরখাস্ত করেন ফরিদুল মোস্তফা খান। যেটি মামলা হিসেবে রেকর্ড না করে পিবিআইকে তদন্তের আদেশ দেন বিচারক। এরপর ১৬ সেপ্টেম্বর তদন্ত সংস্থা পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেন ফরিদ। বাদির আবেদনের প্রেক্ষিতে পরবর্তী ধার্য তারিখে শুনানির জন্য রাখে আদালত।
এদিকে, আইনের চেয়ারে বসে বেআইনি কাজ সংঘটিত করা এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রতিকার পেতে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর উচ্চ আদালতে রীট করা হয়। যার নং-১২১২১।

ফরিদুল মোস্তফা খান জনতার বাণী বিডি ডটকম এবং দৈনিক কক্সবাজার বাণী পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক।

তিনি টেকনাফ হোয়াইক্যং সাতঘরিয়া পাড়ার বাসিন্দা মরহুম ডাঃ মোঃ ইছহাক খানের ছেলে। বর্তমানে শহরের ১ নং ওয়ার্ডের মধ্যম কুতুবদিয়া পাড়ার বাসিন্দা।